Father love ❤
“বাবা"
======
ছোট খাট একটা চাকরি করি। গত মাসে বড় মেয়ে কে বিয়ে দিয়েছি, ধার দেনা করে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা খরচ করে। একটু আগে মেয়ের ফোন।বাবা কেমন আছেন?
-হ্যা মা ভাল। তুই ভাল আছিস তো?
আছি বাবা ভাল।
-এইভাবে বলছিস কেন??তোর শ্বাশুর রা খুশি হয়েছে ত?
উরা কিছু বলেনি। শাশুড়ি বলেছে বিয়েতে যে অাসবাবপত্র গুলো দিয়েছো ওগুলো নাকি নিম্নমানের ।
-(তখন আমার চোখের জলটলটল করছিল) আচ্ছা মা তোর শাশুড়ি কে বলিস পরে না হয় তাদের পছন্দমত কিনে দেব ।
বাবা শুন। তুমি আমাদের বাড়িতে পুজার কাপড় দিবে না?
-হ্যা মা দিব। কেন?
তুমি কাপড় দিওনা। ননদ(জামাইয়ের বোন) বলেছে কাপড় দিলে সবার পছন্দ হবে না।কাপড় না দিয়ে টাকা দিয়ে দিতে। ৩০,০০০ টাকা দিলে,সবার নাকি হয়ে যাবে।
-আচ্ছা মা। তুই চিন্তা করিস না। আমি এখন ও বেঁচে আছি।
(আমার বুঝতে দেরি হলনা, এতক্ষনে মেয়ের চোখের অনেক জল গড়িয়ে পড়েছে)
আচ্ছা বাবা,এখন রাখি।
-আচ্ছা মা ভাল থাকিস।
রাতে ছোট ছেলে বাড়ি ফিরে আমাকে বলছে।
বাবা তুমি আছ?
-হা আছি। কিছু বলবি?
হ্যা, অামার একটা ল্যাপটপ কিনতে হবে। আমার টিউশনির কিছু টাকা আছে। আপনি ৫০ হাজার দিলে হবে।
-আচ্ছা দেখি। খেয়ে ঘুমিয়ে পর।
না বাবা,লেট হলে এক্সাম দিতে পারব না।
এইখানে শেষ নয়,, নিজের বাড়িতে পুজায় জামা কাপড় কিনতে অারো ১৫ -২০ হাজার টাকা লাগবে। আরো রয়েছে মেয়ের বাড়িতে দেওয়ার বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন আয়োজন।
এই সব চিন্তা করতে করতে না খেয়ে শুয়ে পড়েছি। অনিতার মা অনেক কিছু জিজ্ঞেস করেছিল,কিছু না বলে শুয়ে পড়েছি।
মাথায় একটা বিষয় কাজ করছে। টাকা!!টাকা!! আর মেয়ের সুখ।
এইভাবে রাত ১২ টা। হঠাৎ করেই বুকের ব্যথাটা বেড়ে গেছে। ধীরে ধীরে আমি দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। আমার হাত-পা গুলো অকেজো হয়ে আসছে। আমার সারা জীবনের অনেক স্বপ্ন অসমাপ্ত রয়ে গেছে। সেই চিন্তা গুলো এখনো আমার পিছু ছাড়ছেনা।
পরদিন সকাল বেলা। সবাই কান্না কাটি করছে। আমার ছোট মেয়ে আর আমার প্রিয় স্ত্রী সব চেয়ে বেশি কাঁদছে। শুনলাম বড় মেয়ে অামার অসুস্থতার খবর পেয়ে ইতি এরই মধ্যে এসে গেছে। সবার দিকে চেয়ে থাকলাম। অনেক কিছু বলতে চাচ্ছি। কিন্তু কিছুই বলতে পারছিনা। ঠিক ২ মিনিট পর আর কিছু জানিনা। সব শেষ!!!
এইভাবে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক বাবা। আর বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শত শত ছেলে মেয়ে। হয়ত অনেকে এখন ও জানে না,তাদের বাবার মৃত্যুর রহস্য।
এইভাবে প্রতিনিয়ত আমরা হারাচ্ছি আমাদের প্রিয় বাবাদের......
©Abhijit Das

Comments
Post a Comment